সোমবার, ০১ Jul ২০২৪, ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন

মাদ্রাসা শিক্ষার শীর্ষ অবস্থানে ব্রিটেন

মাদ্রাসা শিক্ষার শীর্ষ অবস্থানে ব্রিটেন

যাইনুল আবেদীন ইবরাহীম: যুক্তরাজ্যের সেরা বিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম সারিতে অবস্থান নিয়ে অভূতপূর্ব ইতিহাস সৃষ্টি করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত গেজেটে দেখা যায়, দেশের শ্রেষ্ঠ ২০টি বিদ্যালয়ের তালিকায় আটটি মাদ্রাসাসহ লাগাতার প্রথম তিনটি স্থান অধিকার করেছে মাদ্রাসা তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
ব্লাকবোর্নের ‘আত-তাওহিদ ইসলামিয়া মাদ্রাসা’ সরকারি গেজেট তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে বার্মিংহামের ‘আদন’ বালক মাদ্রাসা। আর তৃতীয় স্থান অধিকারী ‘কভেন্ট্রি’ শহরের ‘আদন বালিকা মাদ্রাসা’। পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ ২০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে আরও পাঁচটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
প্রথম তিনটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্জন করায় ব্রিটেনের মুসলমানদের মাঝে প্রশান্তি ও আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। গেজেটে তাদের অন্তর্ভুক্তি এসব মাদ্রাসার কাজের মূল্যায়নের বহিঃপ্রকাশ। তাছাড়া মাদ্রাসাগুলো ও তার পাঠ্যসূচি গতানুগতিক হওয়ার যে ধারণা জনমনে বদ্ধমূল হয়েছিল, তা দূরীকরণে বিরাট প্রভাব ফেলেছে প্রকাশিত গেজেট। বিশেষ করে তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছে এমন একটি সরকারি সংস্থা থেকে, যাদের শিক্ষার মান যাচাইয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টি ও সঠিক মানদ- নির্ধারণে তীক্ষèতা সর্বমহলে স্বীকৃত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বর্ণিত তথ্যানুযায়ী জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মানবণ্টনের কয়েকটি মানদ- নির্ধারণ করেছে। তার মধ্যে, পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সাবজেক্ট যেমনÑ অঙ্কশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, বিজ্ঞান ও ইংরেজিসহ সব বিভাগের ছাত্রদের মান ঠিক থাকা। ছাত্রছাত্রী বছরের শেষ পর্যন্ত উপস্থিতির বিবেচনা। প্রতিটি ক্লাসে দিন দিন ছাত্রবৃদ্ধির হার। মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা সমাপনকারীর পরিমাণ। সহজে চাকরি পাওয়া কিংবা উচ্চশিক্ষা অব্যাহত রাখা। ইত্যাকার সব বিষয়ে যাচাই-বাছাইপূর্বক অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।
সভ্যতার জাগরণে অংশগ্রহণ
রাজধানী লন্ডনের ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ‘আবদুস সালাম প্যাসো’ সীমাহীন আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি গেজেটের ব্যাপারে আলোকপাত করেন। তিনি মনে করেন, এ সফলতা কয়েক বছরের সাধনার ফল। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা দেশের সর্বোচ্চ পয়েন্ট লাভ করা এ সফলতার কারণ।
(সাবেক ক্যাট স্টিফেন, বর্তমান) ‘মুগনি ইউসুফ ইসলাম’ এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুস সালাম জানান, এ মাদ্রাসাগুলোতে কর্মরতরা খুব তীক্ষèতার সঙ্গে পাঠ্যসূচি বাস্তবায়নে চেষ্টা করে থাকেন। প্রত্যেকেই এ অনুভূতি নিয়ে কাজ করেন, সভ্যতা-সংস্কৃতির উন্নয়নে তার ওপর বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। ব্রিটেনে মুসলমান সন্তানদের দীক্ষা দান এটাই তাদের বড় সফলতা। আবদুস সালামের ধারণা, এ অনুভূতিই কাজ সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিতে ও উপস্থাপিত বিষয় সূক্ষ্মভাবে পাঠদানের প্রতি উৎসাহিত করে থাকে।
আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবদুস সালাম বলেন, শিশুদের মানসিক প্রশান্তিদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি শিশুরা যেন নিজেদের ও নিজেদের লালিত সংস্কৃতি সম্পর্কে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং নিজেদের নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে। তাদের এ-ও শিক্ষা দেওয়া হয়, তাদের ও স্কুলের ছাত্রদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবার প্রতি সম্মানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ চর্চায় শিশুদের দিকনির্দেশনা দান করার প্রতিও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
আবদুস সালাম আরও বলেন, আমাদের মাদ্রাসাগুলো আবদ্ধ সেনানিবাস নয়। বরং তা হলো খোলা প্রান্তর। সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে ভিন্নমত ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে স্বাগত জানানো হয়।
ছাত্রছাত্রীদের মাদ্রাসামুখী হওয়ার হার নিয়ে তিনি সগর্বে আলোকপাত করেন। তিনি তার মাদ্রাসার উদাহরণ টেনে বলেন, আমাদের এখানে ওয়েটিংয়ে থাকা ছাত্রদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। যদি আমরা ৭০ জন ছাত্র ভর্তির লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করি, তখন ৩০০-এর বেশি চলে আসে তাদের আসন নিশ্চিত করতে। এমন পরিস্থিতি হয় অনেক মাদ্রাসায়।
তিনি আশাবাদী, আগামী কয়েক বছরে মাদ্রাসার প্রতি ছাত্রছাত্রীদের ঝোঁক আরও বাড়বে।
গতানুগতিক ধারার পরিবর্তন
সাজেদা হামিদ (রাজধানীর একটি মাদ্রাসার দুই ছাত্রের মা) মনে করেন, এ গেজেটটি যথোপযুক্ত সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। এতে অত্যাচার ও গতানুগতিকতার শিকার মাদ্রাসাগুলোর সফল অভিজ্ঞতার প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসাগুলো ব্রিটেনের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কোনোরূপ ভিন্নতা ব্যতিরেকে তারাও সব বিষয়ে সরকারি পাঠ্যসূচির অনুসরণ করে। পাশাপাশি রয়েছে আরবি, ইসলামি শিষ্টাচার, কোরআন মজিদসহ অতিরিক্ত কিছু বিষয়, যা মুসলিম ও আরবীয় পরিবারের জন্য উৎকৃষ্ট ও উপকারী উদ্যোগ। কেননা পূর্বে সন্তানদের আরবি শেখাতে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে হতো।
মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই তার দুই সন্তানের ফলাফল এবং জ্ঞানধর্মী বা আরবি যে কোনো বিষয়ে সন্তানদ্বয়ের অগ্রগতিতে তার সৌভাগ্যের বর্ণনা দেন তিনি। তিনি মনে করেন, এ পদ্ধতি চালু থাকলে সুদৃঢ় জ্ঞান অর্জন ও আত্মপরিচয়ের ধারা অটুট থাকবে। এটা পশ্চিমাবিশ্বে প্রভু প্রদত্ত অমূল্য একটি নেয়ামত।
প্রয়োজন আরও উন্নতি
যুক্তরাজ্যের জরিপে মাদ্রাসার সংখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য রয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে, মাদ্রাসার পরিমাণ ১ হাজার ৬০০, যাতে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ। ইংল্যান্ডে ৬ হাজার ৮০০ মাদ্রাসা থেকে অনুমোদিত মাদ্রাসার সংখ্যা ২৮। মাদ্রাসাগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তারা অধিকাংশ সময়ই সরকারি কোনো অর্থায়ন গ্রহণ করে না। তাই মাদ্রাসাগুলোর জন্য অনেক ব্যতিক্রমী কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে।
মুসলমান, বিশেষ করে শিশুহার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অনেক মুসলমানের পক্ষ থেকে আওয়াজ উঠেছে, এ ধরনের মাদ্রাসার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হোক। একটি জরিপে দেখা গেছে, শুধু ব্রিটেনে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। মাদ্রাসাগুলোর ভালো ফলাফলের কারণে বছর বছর এর প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। সূত্র : আলজাজিরা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877